ভারতের তামিলনাড়ু প্রদেশের অধিকাংশ মানুষ তামিল ভাষায় কথা বললেও সে প্রদেশে হিন্দি ও ইংরেজিকে প্রদেশের ভাষা হিসেবে চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। এর বিরুদ্ধে আন্দোলনে কিছু মানুষের আত্মাহুতির পর তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী একটি চুক্তি স্বাক্ষরে বাধ্য হন।
(ক) কখন ভারতবর্ষে ব্রিটিশ শাসনের অবসান ঘটে?
(খ) বাঙালি জাতীয়তাবাদের রাজনৈতিক বিজয় ঘটে কখন?
(গ) উদ্দীপকে ভাষা সংক্রান্ত সমস্যার সাথে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালিদের কোন ঘটনার সাদৃশ্য রয়েছে? যুক্তিসহ বর্ণনা কর।
(ঘ) উদ্দীপকে উল্লিখিত চুক্তির সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ একটি চুক্তির মাধ্যমে বাঙালির ভাষা আন্দোলনের প্রাথমিক পর্যায় নিয়ন্ত্রণ করার প্রয়াস চালানাে হয়- চুক্তিটির দফাসমূহ উল্লেখের মাধ্যমে বক্তব্যটির যথার্থতা নিরূপণ কর।
(খ)-এর উত্তর :
১৯৭০ সালের নির্বাচনের মাধ্যমে বাঙালি জাতীয়তাবাদের রাজনৈতিক বিজয় ঘটে। ১৯৭০ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত জাতীয় এবং প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরন্কশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে।
(গ)-এর উত্তর :
উদ্দীপকের ঘটনার সাথে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের সাদৃশ্য রয়েছে। ভাষা নিয়ে বিতর্ক শুরু হয় পাকিস্তানের জন্মের আগে থেকে।
১৯৪৭ সালে পাকিস্তান স্বাধীন হলে এ বিতর্ক আরাে জোরালাে হয়। পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকগােষ্ঠী উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার মতামত দেয় এবং পূর্ব-পাকিস্তানের স্কুল, কলেজ, অফিস, আদালত অন্যান্য ক্ষেত্রে বাংলার পরিবর্তে উর্দু ব্যবহার করার জন্য নির্দেশ দেয় যেখানে পাকিস্তানের শতকরা ৫৬ জন বাংলা ভাষায় কথায় বলে। পশ্চিম পাকিস্তানিদের ঐ ধরনের এক তরফা সিদ্ধান্ত পূর্ব পাকিস্তানি তথা বাঙলিদের শিক্ষা, সংস্কৃতি এবং জাতীয়তাবাদের উপর আঘাত হানে। তাই বাঙালিরা নিজের মুখের ভাষা রক্ষার জন্য তারা পাকিস্তানি শাসক গােষ্ঠীর সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আন্দোালনে লিপ্ত হয় এবং অনেকের আত্মত্যাগের বিনিময়ে তাঁরা মাতৃভাষা রক্ষায় সফল হয়েছিল।
(ঘ)-এর উক্তর :
উদ্দীপকে উল্লিখিত চুক্তির মতােই অনুরূপ একটি চুক্তির মাধ্যমে বাঙালির ভাষা আন্দোলনের প্রাথমিক পর্যায়ও নিয়ন্ত্রণ করার প্রয়াস চালানাে হয়। নিম্নে তা তুলে ধরা হলাে :-
ভাষার দাবি আদায়ে এই প্রাথমিক আন্দোলন শিথিল করার জন্য তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দীন সংগ্রাম পরিষদের সাথে ৮ দফা চুক্তি করতে বাধ্য হন। ৭ দফা চুক্তিসমূহ ছিল -----
১. বাংলা ভাষার প্রশ্নে গ্রেপ্তারকৃত সকলকে অবিলম্বে মুক্তি দেওয়া হবে।
২. পুলিশি অত্যাচারের বিষয়ে তদন্ত করে একটি বিবৃতি প্রদান করা হবে।
৩. বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার জন্য পূর্ব বাংলার আইন পরিষদে একটি বিশেষ প্রস্তাব উতথাপন করা হবে।
৪. পূর্ব বাংলার সরকারি ভাষা হিসেবে ইংরেজির উত্থানের পর, বাংলাকে সরকারী ভাষা হিসেবে চালু করা হবে।
৫. সংবাদপত্রের উপর হতে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করতে হবে।
৬. আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে না।
৭. ২৯ ফেব্রুয়ারি হতে জারিকৃত ১৪8 ধারা প্রত্যাহার করা হবে।
উপরিউক্ত আলােচনা থেকে তাই বলা যায় যে, প্রেক্ষাপট-২ তে উল্লিখিত একটি চুক্তির মতােই, খাজা, নাজিমুদ্দীন ৮ দফা চুক্তির মাধ্যমে বাঙালির ভাষা আন্দোলনের প্রাথমিক পর্যায় নিয়ন্ত্রণ করার প্রয়াস চালান।
