ন্যালসন ম্যান্ডেলা ছিলেন একজন অবিসংবাদিত নেতা। তিনি বর্ণবাদ প্রথার বিরুদ্ধে আজীবন বিদ্রোহ করে গেছেন। বর্ণবাদ প্রথার কারণে দক্ষিণ আফ্রিকার অধিকাংশ কৃষাঙ্গ লােকজন নানা ক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার হত। তাই তিনি বর্ণবাদ প্রথা উচ্ছেদ করার জন্য নানা ধরনের কর্মসূচি হাতে নিয়েছিলেন। তিনি এ আন্দোলনের কারণে ২৮ বছর কারাবরণ করেছেন। তাই তিনি পৃথিবীর সকলের কাছে আজীবন স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।
(ক) মােহাম্মদ আলী জিন্নাহ কবে প্রথম মুসলিম লীগের দাপ্তরিক ভাষা উর্দু করার প্রস্তার দেন?
(খ) ১৯৪৮ সালে ২৬ ও ২৯ ফেব্রুয়ারি ধর্মঘট পালিত হওয়ার কারণ কী?
(গ) ন্যালসন ম্যান্ডেলার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ কোন নেতা পূর্ব- বাংলার জনগণকে বৈষম্যের হাত থেকে রক্ষার জন্য কর্মসূচি ঘােষণা করেছিলেন? তার গৃহিত কর্মসূচির বর্ণনা দাও।
(ঘ) 'তিনিও ন্যালসন ম্যান্ডেলার মতাে বাংলাদেশের মানুষের কাছে আজীবন স্মরণীয় হয়ে থাককেন' উক্তিটি বিশ্রেষণ কর।
(ক)-এর উত্তর :
১৯৩৭ সালে মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ উর্দুকে মুসলিম লীগের অফিসিয়াল ভাষা করার প্রস্তাব দেন।
(খ)-এর উত্তর :
১৯৪৮ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তান গণপরিষদের সদস্য ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত গণপরিষদের ভাষা হিসেবে উর্দু ও ইংরেজির পাশাপাশি বাংলার ব্যবহারের দাবি জানান। তার দাবি অগ্রাহ্য হলে ২৬ ও ২৯ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় ধর্মঘট পালিত হয়।
(গ)-এর উত্তর :
ন্যালসন ম্যান্ডেলার সাথে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের সাদৃশ্য রয়েছে। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই পশ্চিম পাকিস্তানিরা (মূল পাকিস্তান) পূর্ব পাকিস্তানের (বাংলাদেশ) জনগণের উপর নানাভাবে অত্যাচার, জুলুম ও নিপীড়ন চালাচ্ছিল। পশ্চিম পাকিস্তানে সামরিক শাসন জারি হওয়ার পর পূর্ব পাকিস্তানের প্রতি অর্থনৈতিক, প্রশাসনিক, প্রতিরক্ষা, শিক্ষা ও সামাজিক ক্ষেত্রে বৈষম্য প্রকট হতে থাকে। পূর্ব-বাংলার জনগণকে এসব বৈষম্য এবং তাদের স্বার্থ ও অস্তিত্ব রক্ষার্থে পূর্ব-বাংলার অসাম্প্রদায়িক নেতৃত্ব শেখ মুজিবুর রহমান ৬ দফা কর্মসূচি ঘােষণা করেছিলেন। দফাগুলাে হচ্ছে :
১. যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাধীনে সংসদীয় পদ্ধতির সরকার হবে। সর্বজনীন ভােটাধিকারের ভিত্তিতে প্রাপ্ত বয়স্কদের ভাটে নির্বাচন অনুষ্ঠান।
২. কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে মাত্র দুটি বিষয় থাকবে- প্রতিরক্ষা ও পররষ্ট্র মন্ত্রণালয়। অন্যান্য সকল বিষয়ে অঙ্গরাজ্যগুলাের পূর্ণ ক্ষমতা থাকবে।
৩. সারা দেশে হয় অবাধে বিনিয়ােগযােগ্য দু'ধরনের মুদ্রা, না হয় বিশেষ শর্ত সাপেক্ষে একই ধরনের মুদ্রা করা যাবে।
৪. আঞ্চলিক সরকারের সব ধরনের কর আরোপের ক্ষমতা থাকবে। আঞ্চলিক সরকার কর্তৃক সংগৃহীত রাজস্বের একটি নির্দিষ্ট অংশ কেন্দ্রীয় সরকারকে দেওয়ার ব্যবস্থা থাকবে।
৫. রাজ্যগুলি তাদের নিজস্ব উপার্জিত বৈদেশিক মুদ্রার মালিক হবে, যার একটি নির্দিষ্ট অংশ তারা কেন্দ্রকে দেবে।
৬. অঙ্গরাজ্যগুলােকে আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্য আধাস্মামরিক বাহিনী (Para Militia Force) গঠন করার ক্ষমতা দেওয়া।
তাই বলা যায়, ন্যালসন ম্যান্ডেলার সাথে শেখ মুজিবুর রহমানের সাদৃশ্য রয়েছে। ন্যালসন ম্যান্ডেলা যেমন দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে বর্ণবাদ প্রথা উচ্ছেদ করার জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছিলেন তেমনি শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালিদের স্বার্থ ও অস্তিত্ব রক্ষার্থে ছয় দফা কর্মসূচি ঘােষণা করেছিলেন।
(ঘ)-এর উত্তর :
ন্যালসন ম্যান্ডেলা আজীবন পৃথিবীর সকলের কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। কারণ তিনি দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে বর্ণবাদ উচ্ছেদ করার জন্য আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন এবং দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে বর্ণবাদ প্রথা দূর করার জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছিলেন। তিনি বর্ণবাদ প্রথা আন্দোলনের কারণে ২৮ বছর কারাবরণ করেছেন।
ন্যালসন ম্যান্ডেলার মতাে শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালিদের হৃদয়ে আজীবন স্মরণীয় হতে থাকবেন। ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে বাংলার স্বাধীনতার জন্য সংগঠিত সশস্ত্র আন্দোলনে তিনি মুখ্য ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি বাঙালিদের হৃদয়ে স্মরণীয় হয়ে থাকার পিছনে নিম্নোক্ত কারণ উল্লেখযােগ্য-
তিনি বাংলাদেশে অসাম্প্রদায়িক চিন্তা-চেতনা প্রতিষ্ঠার জন্য মুসলিম লীগ থেকে বের হয়ে ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখেন। শুরুতেই আওয়ামী লীগ বাঙালিদের স্বার্থে একটি বিস্তৃত কর্মসূচি গ্রহণ করেছিল। ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট সরকারকে অকার্যকর করার পর পূর্ব-পাকিস্তানে অসন্তোষ বিরাজ করতে থাকে। এই অসন্তোষ এক পর্যায়ে আন্দোলনে রূপ লাভ করে। পাকিস্তান সরকার পাকিস্তানকে বাঁচানাের জন্য পাকিস্তানে সামারিক শাসন জারি করে। সামরিক শাসন জারি হওয়ার পর পূর্ব বাংলার প্রতি অর্থনৈতিক, সামরিক, প্রশাসনিক ও শিক্ষা ক্ষেত্রে বৈষম্য বাড়তে থাকে। এসব বৈষম্যের হাত থেকে বাঙালিদের রক্ষা করার জন্য শেখ মুজিবুর রহমান লাহােরে বিরােধী দলের সম্মেলনে ছয় দফা দাবি উত্থাপন করেন।
১৯৭০ সালের নির্বাচনও পাকিস্তান সরকার মেনে না নিলে তখন পূর্ব- পাকিস্তানের মুক্তির জন্য স্বাধীনতা যুদ্ধ অবধারিত হয়ে ওঠে। শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে মাধীনতা ঘােষণা করলে সর্বস্তরের জনগণ যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়। দীর্ঘ নয় মাস রক্ষক্ষয়ী যুদ্ধের পর বাঙালি তাদের কাঙিক্ষত স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনে।
তাই বলা যায়, ন্যালসন ম্যান্ডেলার মতাে বাংলাদেশ পৃথিবীর বুকে যতদিন মাথা তুলে দাড়িয়ে থাকবে শেখ মুজিবুর রহমান ততােদিন বাঙালিদের মনে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।
Nelson Mandela was an undisputed leader. He has revolted against racism all his life. Due to racism, most of South Africa's black people were discriminated against in many ways. So he undertook various programs to eradicate racism. He has been imprisoned for 26 years for this movement. So he will be remembered forever by everyone in the world.
(A) When did Muhammad Ali Jinnah first propose to make Urdu the official language of the Muslim League?
(B) What was the reason for the strike on 26 and 29 February 1948?
(C) A program similar to Nelson Mandela to protect the people of East Bengal from discrimination Announced? Describe the program he has adopted.
(D) Analyze the statement 'He too will be remembered forever by the people of Bangladesh according to Nelson Mandela'.
Answer to (a) :
In 1938, Muhammad Ali Jinnah proposed making Urdu the official language of the Muslim League.
Answer to (b) :
On 23 February 1947, Dhirendranath Dutt, a member of the Pakistan Constituent Assembly, demanded the use of Bengali as well as Urdu and English as the language of the Constituent Assembly. If his demand was ignored, a strike was observed in Dhaka on 26 and 29 February.
Answer to (c) :
Sheikh Mujibur Rahman, the leader of Bangladesh's independence movement, has similarities with Nelson Mandela. Since the independence of Pakistan in 1947, the West Pakistanis (original Pakistan) have been oppressing the people of East Pakistan (Bangladesh) in various ways. After the imposition of military rule in West Pakistan, economic, administrative, defense, educational and social inequalities towards East Pakistan became apparent. Sheikh Mujibur Rahman, the non-communal leader of East Bengal, announced a six-point program to protect the people of East Bengal from these inequalities and their interests and existence. The points are:
1. There will be a parliamentary system of government under the federal system. Elections for adults on the basis of universal suffrage.
2. The central government will have only two issues - the Ministry of Defense and the Ministry of Foreign Affairs. The states will have full power over all other matters.
3. Across the country, there are two types of currencies that can be used freely, or the same type of currency can be made subject to special conditions.
4. The regional government will have the power to impose all kinds of taxes. There will be an arrangement to give a certain portion of the revenue collected by the regional government to the central government.
5. States will own their own earned foreign currency, a certain portion of which they will give to the center.
6. Empowering states to form paramilitary forces for regional security.
Therefore, it can be said that Sheikh Mujibur Rahman has similarities with Nelson Mandela. Just as Nelson Mandela undertook various programs to eradicate racism from South Africa, Sheikh Mujibur Rahman announced a six-point program to protect the interests and existence of Bengalis.
Answer to (d) :
Nelson Mandela will always be remembered by everyone in the world. Because he has fought all his life to eradicate racism from South Africa and has taken various programs to eradicate racism from South Africa. He was imprisoned for 27 years for his racist movement.
According to Nelson Mandela, Sheikh Mujibur Rahman will always be remembered in the hearts of Bengalis. He has played a major role in the armed movement for the independence of Bengal, starting from the language movement. The following are the reasons why he is remembered in the hearts of Bengalis:
He left the Muslim League to establish a non-communal ideology in Bangladesh and played a role in the establishment of the Awami League on 23 June 1949. From the very beginning the Awami League undertook a comprehensive program in the interest of the Bengalis. After the disbandment of the United Front government in 1954, discontent continued to prevail in East Pakistan. This discontent at one stage took the form of a movement. The government of Pakistan imposed martial law in Pakistan to save Pakistan. After the imposition of military rule, economic, military, administrative and educational inequalities towards East Bengal increased. Sheikh Mujibur Rahman raised a six-point demand at a conference of the opposition in Lahore to protect the Bengalis from these inequalities.
If the government of Pakistan did not accept the election of 1970, then the war of independence for the liberation of East Pakistan became inevitable. When Sheikh Mujibur Rahman declared independence in the early hours of March 26, 1971, people of all walks of life went to war. After a long nine-month defensive war, the Bengalis snatched their desired independence.
Therefore, according to Nelson Mandela, as long as Bangladesh stands tall in the heart of the world, Sheikh Mujibur Rahman will be remembered by the Bengalis.